শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১১

উপমহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচঙ্গ

উপমহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচঙ্গঅনেকেই এই গ্রামকে এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বলে অভিহিত করেনহবিগঞ্জে সদর থেকে বানিয়াচঙ্গ গামের দূরত্ব ২ কিঃ মিঃ ও সিলেট শহর থেকে ১১৭ কিঃ মিঃদুপাশে বিস্তীর্ণ অসলের মাঠসোনালী প্রান্তর ধান, আকাশের সাথে মিশে যাওয়া হাওর জনমহাল, আকাশে সাদা বকের মায়াবী খেলাসহ প্রাকুতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত একটি গ্রামের নাম বানিয়াচঙ্গমূল বানিয়াচঙ্গ গ্রামটি ৪টি ইউনিয়নের সমন্ময়ে গঠিত১২০০ বসর আগে বানিয়াচঙ্গ গ্রাম প্রতিষ্ঠা হয়েছেআদি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কেশন মিশ্রের নাম অম্লান হয়ে আছেথানা হিসেবে পরিচিত ১৭৯০ সাল বানিয়াচঙ্গ একটি রাজ্য ছিলরাজবাড়ীর অস্থিত্ব এখন বিদ্যামানবানিয়াচঙ্গ এর নামকরণ নিয়ে নানা কাহিনী রয়েছে হাওরে চাঙ্গা বা মাচাঙ্গা বেঁধে বানিয়া কিংবা ব্যবসায়ীর বসবাস করতো বলে এখানকার নাম বানিয়াচাঙ্গ থেকে বানিয়াচঙ্গ হয়েছেআবার কেউ কেউ বলেন, এই এলাকায় নাকি যুদ্ধ হয়েছিলফলে বিনায়ে জঙ্গ আস্ত আজা অর্থা ঝঁগড়ার উপত্তি হল এখানে বানিয়াচঙ্গ এর নামকরণ হয় বলে অনুমান করা হয়বানিয়াচঙ্গ এ পুটিয়া নামে একটি বিশাল বিল ছিলনানা জাতের পাখি ছিল পুটিয়া বিলেবিলের পাড়ে চাঙ্গ স্থাপন করে বানিয়া নামের এক শিকারী পাখি শিকার করতোএই বানিয়াচঙ্গ থেকে আজকের বানিয়াচঙ্গকথিত আছে একজন বাহ্মণ বণিক বাণিজ্য উপলক্ষে নৌকা যোগে আসেনবানিয়া বা বণিকের মাঝি ছিল চঙ্গ, মানে নমঃশুদ চাড়ালএই বানিয়া ও চঙ্গ দুই শব্দের সমন্ময়ে বানিয়াচঙ্গ এর নামকরণ হয়েছে। 
রাজবাড়ীর অবশিষ্ট অংশ

বানিয়াচঙ্গ সীমানা হচ্ছে উত্তর দিকে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানা, শাল্লা থানা ও হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ থানাদক্ষিনে হবিগঞ্জ থানা সদর ও হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানাপূর্বে হবিগঞ্জ থানার সদর বাহুবল থানা ও নবীগঞ্জ থানাপশ্চিমে আজমিরীগঞ্জ থানা ও কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানাবাংলাদেশের টেলিভিশনের ভরা নদীর বাকে অনুষ্ঠানের জন্য এডভোকেট শাহজাহান বিশ্বাসের রচিত গানে বানয়াচঙ্গের চিত্র ফুটে উঠেছেগানটি নিম্নরূপঃ-

সুরমা নদীর বুকের মানিক শুটকী নদী নাম
সেই নদীর তীরেতে ভাইরে বানিয়াচঙ্গ গ্রাম
দিগে পাশে তিন চারিমাইল এ গেরামটি ভাই
একশ বিশ মহল্লা নিয়া তাহারই রোশনাই
গড়ের খালটি চারদিকেতে বহিয়া চইলাছে
গলার মাঝে মালা যেমন শোভা পাইতাছে
লাখের অধিক বসত সেতায় হিন্দু-মুসলমান
কমলাবতী সাগরদিঘীর রইয়াছে সুনাম
আরে ও------ও---------ও--------
বানিয়াচঙ্গ এর জন্ম নিয়া ধন্য মোর তাই
মনসুর বয়াতি ছিলেন এই গ্রামের জানি
শ্যাম বাউলের এক ভরাটা কান্দে দিনরজনী
কাঁন্দ্যা গেলো আলাল-দুলাল জনমের মতন
বানিয়াচঙ্গ এর সেই কাহিনী শুনেন দিয়া মন
এই দুনিয়া ঘুরলেন যিনি সাইকেল চড়িয়া
রামনাথ বিশ্বাস নামটি তাহাঁর শুনেন সুজনীয়!
কবি জয়তুন বিশ্বাস ছিলো উদ্ভাদ রতন
যার পরশে পাইলা কত জ্ঞানের দরশন
বারিয়াচঙ্গ এর জারি ভাইরে এই করিলাম শেষ
সালাম আদাব সবাইরে ভাই জানাইলাম অশেষ।।

বানিয়াচঙ্গের আব্দুল্লাহ সম্পর্কে গ্রন্থে জাতীয় অধ্যাপক ও উপমহাদেশের প্রখ্যাত দার্শনিক দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফ লিখেন অত্যন্ত কর্মঠ ও স আব্দুল্লাহ এ দেশের খেলাফত আন্দোলনের ¯^v_©K করার জন্য কর্মশীল ছিলেন এবং এক বছর জেলও খেটেছেনসিলেটের মুসলিম রাজনৈতিক জাগরণের তার প্রচুর অবদান রয়েছেন প্রখ্যাত গবেষক মোহাম্মদ ফজলুর রহমান প্রণীত সিলেটের একশত একজন গ্রন্থে আব্দুল্লাহ বানিয়াচঙ্গ স্থান রয়েছেখেলাফত কর্মীদের সাথে ১৯২২-২৩ সাল পর্যন্ত তিনি কারাবরণ করেনতিনি আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীঘ অর্গানাজিং কমিটি ১০ সদস্যের অন্যতম ছিলেনসিলেট রেফারেন্ডাম আন্দোলনে অমানুষিক পরিশ্রম করেনবৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা আব্দুল্লাহ বানিয়াচঙ্গ বাড়ীতে ১৯৪৮ সালে দেশ বরেণ্য আব্বাসী উদ্দিন ও তার পুত্র মোস্তাফা জামান আব্বাসী বানিয়াচঙ্গ এসেছিলেন
আব্বাসী গেয়েছেনঃ-

ও বাজান চল যাই মাঠে লাঙ্গল বাইতে
গরুর কাঁেধ লাঙ্গল দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে...

সুললিত কন্ঠে গাওয়া এই গানটি বানিয়াচঙ্গ বাসীকে মাতওয়ারা করে তুলতোএখানকার মানুষ বৃটিশ আমল থেকে রাজনীতি সচেতনমৌলভী আব্দুল্লাহ আবুল হোসেন, শাহ ক্বারী মুমিন উদ্দিন, হেম সেন ও বিরেন সেন প্রমুখ বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন১৯৯৬ সালে ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাগরদীঘিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ও হবিগঞ্জ-বানিয়াচঙ্গ-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেনদীঘির দৈর্ঘ্য দেড় কিলোমিটার ও প্রস্থ এক কিলোমিটারজমির পরিমাণ ৬৬.৯৩ একরদীঘির চারদিকেই গড়ে উঠেছে জনপদদীঘির পারেই ৩শ বছর পুরোনো বাড়ীর ভগ্নাবশেষ এখনও বিদ্যামানবিশাল পাথরের দারাঘুটি এখনও কিংবদন্তী আছেপ্রাচীনকালে দুপয়লয়ান ভাই এই বিশাল দাবাঘুটি দিয়ে খেলতেন। 
মুকার হাওরের মধ্যে মাকাল কান্দি গ্রাম
শ্রী শ্রী বাউল †Mv¯^vgxi আখড়া ৩শ বছর পুরোনো হিন্দুস্থান তীর্থস্থান২ একর ভূমিতে গড়ে উঠা আঁখড়া বর্তমান পরিচালক মোহন্ত আশুতোষবানিয়াচঙ্গ এর চারপাশে বেষ্টিত খাল, ঈদগাহ, ডিগ্রী কলেজ, মিনার, গণপাঠাগার ও হায়দার শাহার মাজার বানিয়াচঙ্গ কে উপমহাদেশের বৃহত্তম গ্রামের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে তুলেছে
(তথ্য বাংলার ইতিবৃত্ত- " হিস্টোরিয়ান ডঃ মুমিনুল হক "  পৃষ্টা-৪৩৭-৪৩৮)
(ফটো সংগ্রহে ঃ মিশকাত আহমদ  -ডাইনামিক ওয়েব ডিজাইনার- )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন