আধ্যাত্মিকতায় সিলেট বিভাগ

 
অলিকুল শিরোমণী হযরত শাহজালাল (রঃ) এর পবিত্র মাজার শরিফ

বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেট। উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ সুফী সাধক হযরত শাহজালাল (রহঃ) ১৩০৩ খৃঃ সিলেটে পদার্পন করেন। তার সাথে ৩৬০ আঊলিয়া সিলেট অঞ্চলসহ আশে পাশের এলাকায় ইসলাম প্রচারের কাজে নেমে পড়েন। ইসলাম ধর্ম প্রচারের সঙ্গে কোন জোর জবরদস্তির সম্পর্ক ছিল না। ইসলাম প্রচারের মূলে ছিল ইসলামের শিক্ষা ও মুসলমানের জীবনাদর্শ। অলি আউলিয়ারা যেখানেই গিয়াছেন সেখানে তাদের আচার আচরণে ও চরিত্রের মানবতা গুণে জনসাধারন মুগ্ধ হয়ে দলে দলে ইসলামকে কবুল করে নিয়েছেন। ১২০৪ সালে মুহাম্মদ বখতিয়ার বাংলাদেশে মুসলিম রাজ্য গড়ে 
মাজারের জালালী কবুতর সমূহ


তুলেন। মোঃ বখতিয়ারের মৃত্যুর প্রায় ১০০ বছর পর মুসলমানরা দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গে প্রবেশ করে নাই। আভ্যন্তরিন গোলমালের কারনে মুসলমানদের প্রবেশে ঝুকি ছিল। কালীন মুহাম্মদ বখতিয়ারের রাজত্ব কালে রাজধানী ছিল দেবকোটরাজ্যের সীমানা ছিল পূর্বে তিস্তা নদী ও করতোয়া এবং দক্ষিণে গঙ্গা নদীবলবন বংশীয় বাংলার ¯^vaxb সুলতান রুকনুদ্দিন কৈকউস প্রথম পূর্ববঙ্গে মুসলিম আধিপত্য লাভ করেনতিনিই সর্বপ্রথম বঙ্গ নামাঙ্কিত টাকশাল থেকে মুদ্রা প্রচার করেনতার আমলে একটা মুদ্রা সিলেট শহরের কালীঘাটে পাওয়া যায়
হযরত শাহজালাল (রঃ) এর রেখে যাওয়া পিতলের ডে

 রুকনুদ্দীনের সময়ে তার বিখ্যাত সেনাপতি জাফর খান গাজী ১২৯৮ সালে সাতঁগাও বা ত্রিবেনী দখল করেনরুকনুদ্দীনের পরর্বতীতে সুলতান শামসউদ্দিন ফিরোজশাহের (১৩০১-১৩২২) সময়ে মুসলমানেরা পূর্ববঙ্গে প্রাধান্য লাভ করেতিনিই সর্বপ্রথম সোনারগাঁও ও ময়মনসিংহের গিয়াসপুর থেকে তাঁর নামাংকিত মুদ্রা এর প্রচলন করেনসোনারগাঁও এর প্রথম মুদ্রা ১৩০৫ সালে আর গিয়াসপুরের প্রথম মুদ্রা ১৩২২ সালে মুদ্রিত হয়শামসউদ্দিনের সময়ে সিলেট মুসলমানদের দখলে আসেসিলেট বিজয়ের ত্রিশ/পয়ত্রিশ বছরের পর চট্টগ্রাম মুসলমানদের দখলে আসেসম্ভবত মখদুম শাহদৌলা (রঃ) বাংলাদেশের প্রথম অলীতাঁর মাজার পাবনা জেলার শাহজাদপুরে অবস্থিততিনি জালাল উদ্দিন বোখারীর সমসাময়িকতিনি ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পূর্ববঙ্গে আগমন করেনবাংলাদেশে সুফি সাধকের দান Ab¯^xKv©h| তাদের কার্যক্রম শুধু এখানকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল নাতারা জনসাধারণের মনে ও সমাজ জীবনে বিপুল প্রভাব বিস্তার লাভ করেনযখন ব্রাহ্মনরা ত্রয়োদেশে হিন্দুদের বর্ণাশ্রমের নাগপাশ বাধঁতে ব্যস্ত থাকে তখন এই অলী ও দরবেশরা তাদেঁর নিজের ভাষায় কথা বলে তাদের মন জয় করেন
হযরত শাহজালাল (রঃ) এর তোরণ (যা শেখঘাটে অবস্থিত)
উপমহাদেশের সাথে আরবদের সম্পর্ক বহু প্রাচীনকালেরব্যবসা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে এক শ্রেণীর আরবদের আগমন ঘটেদক্ষিণ ভারতের সমুদ্রতীরর্বতী এলাকায় আরবরা প্রথমে সমুদ্র পথে আগমন করেনমিঃ টেলেষ্ট বলেন, গ্রীকরা এই উপমহাদেশে পরিচিত হওয়ার আগে ৪র্থ ও ৫ম শতাব্দীতে আরবরা ভারতের সুরাত, ক্যামবে, মাংগালোর, কালিকুট ইত্যাদি বন্দরে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করেআরবরা ব্যবসা বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে তাদের সাথে নিয়ে এসেছিলেন ধর্মীয় জীবনতাদের তপরতায় উপমহাদেশের হাজার হাজার বিধর্মী ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে স্থায়ীভাবে আশ্রয় নেনঅপর শ্রেণীর আরব সূফী আউলিয়ারা স্থল ও জল পথে এসে ইসলামের বাণী প্রচারে লিপ্ত হন
মাজারের ভীতরের দৃশ্য
কথিত আছে যে, হযরত শাহজালাল ৩৬০ জন দরবেশকে সঙ্গে নিয়ে সিলেট আসেনএই সিলেট জেলা ৩৬০ জন আউলিয়ার দেশ বলে পরিচিতকিন্তু হযরত শাহজালালের সঙ্গে ঠিক কতজন দরবেশ সিলেট এসেছিলেন তা জানা যায়নিঅবশিষ্ট আউলিয়া হযরতের জীবিতকালে বা তারপরে শ্রীহট্টে এসেছিলেনশেখ পীর, কাজী ইলিয়াস উদ্দিন ওরফে কাজী গয়লা, সৈয়দ আলাউদ্দিন, হাজী শেখ শামসউদ্দিন (সুনাইতা), শাহ আরফিন (লাউড়), সৈয়দ আফজল, শাহ হাফিজ ফারুকি (কাউকাপন), শাহ হেলিমুদ্দিন কোরেশী (কুলাউড়া), সৈয়দ জাহান, শাহ কামাল (জগন্নাথপুর), শাহ সদরউদ্দিন কোরেশী (পর্বতপুর), সৈয়দ শামসউদ্দিন শাহপাতা (ভাদেশ্বর) উত্যাদি বিখ্যাতহযরত শাহজালালের আদেশে বারোজন দরবেশসহ সৈয়দ নাসির উদ্দিন তরফ জয় করতে যান বলে তরফকে বার আউলিয়ার মুলুক নামে পরিচিত

সিলেট অঞ্চলসহ ভারত বর্ষে ইসলামের বিজয়ের প্রধান কারণ ছিল সামাজিক সাম্যের মহান আর্দশের A¯^xK…wZ ও অনুপস্থিতিমধ্যপ্রাচ্য থেকে যে সমস্ত আউলিয়ারা এসেছিলেন তারা ধার্মিক, নিষ্ঠাবান, সরল, উদার ও উন্নত চরিত্রের অধীকারী ছিলেনফলে অমুসলমানদের শ্রদ্ধা অর্জন সম্ভব হয়েছিলঅমুসলিমরা দলে দলে ইসলামের পতাকা তলে আশ্রয় নেননবম থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যে চট্টগ্রাম এলাকাতে ব্যবসার উদ্দেশ্যে মুসলমান বসতি গড়ে উঠেত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু হয়ইসলাম প্রচারের মহান দায়িত্ব পালন করেন সূফী দরবেশরাদরবেশগণ বিভিন্ন স্থান ভ্রমন করে পছন্দমত স্থান নির্বাচন করে আবাস স্থল গড়ে তুলেনহযরত শাহজালাল (রঃ) এর প্রধান সেনাপতি হযরত সৈয়দ নাসির উদ্দিন সহ ৩৬০ আউলিয়াদেরকে নিয়ে তিনি সিলেট অঞ্চল জয় করেনগৌড়গোবিন্দ ও তরফের রাজা আচক নারায়ণ সহ অন্যান্য রাজাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ জনসাধারণ দলে দলে ইলামের দিকে ধাবিত হয়হযরত শাহজালাল (রঃ) বিনা যুদ্ধে অত্যাচারী গৌড় গোবিন্দ রাজাকে পরাভূত করেন
মাজারের পুকুর
হযরত শাহজালাল (রঃ) ১৩০৩ সালে সিলেট বিভাগে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডয়ন করেনবাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকান্ড হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে আরম্ভ করা হয়দেশে-বিদেশে মুসলমান ও অমুসলমান নেতৃবৃন্দরা এই মাজার পরিদর্শন করে থাকেনএই দৃষ্টিকোণ থেকে পবিত্র মাজারটি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। 

(তথ্যঃ সিলেট বিভাগের ইতিবৃত্ত- হিস্টোরিয়ান ডঃ মুমিনুল হক- পৃষ্টা ৬৭-৬৮)

(ফটো সংগ্রহেঃ মিশকাত আহমেদ)