কমলারাণীর ইতিহাস

কমলারাণীর দীঘি
 সিলেট বিভাগের মৌলভী বাজার জেলার রাজনগর থানায় কমলারাণীর দীঘি অবস্থিতউল্লেখযোগ্য যে, সুবিদ নারায়ণ রাজা হিসেবে শিক্ষিত সংস্কারপন্থি ছিলেনরাজা স্ত্রী কমলারাণীকে নিয়ে সুখে সাচ্ছন্দে রাজ্য পরিচালনা করছিলেনসে সময় উমা নন্দ রাজার এক ডাক সাইটে মন্ত্রী ছিলেনরাজার ভান্ডার রক্ষক ছিলেন cևį^i বিশ্বাস এবং গোবিন্দপুরকায়স্থ ছিলেন প্রধান লেখকবিজ্ঞ পরিষদ নিয়ে রাজা সুবিদ নারায়নের রাজ্য ভালভাবে চলছে তখন এমনি এক রাতে রাজা সপ্নে দেখলেন কে যেনো আদেশ দিচ্ছে হে ইটা রাজ্যের রাজা তোমার বাড়ীর সম্মুখে ১২ জৈষ্টি, ১২ কেদার ও ১২ হাল জমি নিয়ে একটি সুপ্রশস্থ দীঘি খনন করোস্ত্রী কমলারাণী রাজার সপ্নের কথা শুনে রাজা সুবিদ নারায়ণকে উসাহ দিলেনতিনি ছিলেন ¯^vgxi অনুপ্রেরণা দাতাদরিদ্র প্রজাগণ যদি সুপানিয় পান করতে না পারে তবে ক্ষতির সম্ভাবনা ভেবে রাজা খনন কাজ আরম্ভ করলেনকথিত আছে যে, দীঘি খনন করতে প্রথম কোদাল খনন কারীকে রাণী গলার হার উপহার দিয়েছিলখনন কাজ শেষ হলে রাজা এক মহাবিপদের সম্মুখিন হনএত টাকা, জমি, পরিশ্রমের পর দীঘিতে জল নেইরাজা চিন্তায় অস্থির দিশেহারাতখন রাজা আবার সপ্নে দেখলেন যতক্ষণ না পর্যন্ত স্ত্রী কমলারাণীকে জলদেবীর উদ্দ্যেশ্যে প্রেরণ না করবেন ততক্ষন দীঘি জলশুন্য রবেরাজা ¯^‡cœi বিবরণ কমলারাণীকে বর্ণনা করলেনরাণী স্‌চ্েছায় জলদেবীর উদ্দেশ্যে যেতে রাজী হলেনপন্ডিতবর্গের পরামর্শে কমলারাণীকে দীঘিতে অর্পনের তারিখ ধার্য্য হলরাজ্যের প্রজা, মন্ত্রী সবাই উসুতভাবে যেন দৃশ্য অবলোকনের প্রহর গুনছেনির্ধারিত দিনে কমলারাণী বত্রিশ অলংকারে সেজে তিন মাসের দুগ্ধপোষ্য শিশুকে রাজ গৃহে রেখে আত্মীয় ¯^Rb প্রজাবৃন্দের লোকারণ্য দীঘির পাড়ের সবাইকে শেষ বিদায় জানিয়ে দীঘিতে অবতরণ করতে লাগলেনরাণী যখন দীঘির তলদেশে নেমে জলদেবীর স্ততি বন্দনা শেষ করলেন সাথে সাথে দীঘি জলে পরিপূর্ণ হয়ে গেলতখন রাণী শেষ বারের মতো মাতাপিতা দেখার সআদ ছিল কিন্তু আর দেখা হলো নাকথিত আছে যে, মাতাপিতার আহাজারীতে জলদেবী দয়া করে কমলারাণীকে জলের উপর ভাসিয়েছিলেনকমলা রাণী রাজাকে ¯^‡cœ আদেশ দিলেন হে প্রিয়তম ¯^vgx আমার দুগ্ধপোষ্যকে দীঘির পাড়ে ছোট গৃহ বানিয়ে সুর্য্য উঠার আগে রাখবে আমি দুগ্ধ পান করানোর জন্য আর দর্শনের সুযোগ পাবোকিন্তু আমাকে স্পর্শ করতে পারবে নাআমি তোমার মানস মন্দিরে থাকবোরাণীর আদেশ রাজা অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেনকিন্তু রাণী এসে দুগ্ধ পান করিয়ে আবার পানিতে চলে যানএভাবে কয়েকদিন যাবার পর একদিন রাজা দুগ্ধ পান অবস্থায় রাণীকে আচঁলে ধরতে গেলেনস্পর্শ করতে পারবেন না একথা রাজা ভুলে গিয়েছিলেনরাণী তক্ষণা দীঘিতে ঝা৭প দিলেনকথিত আছে একটি ¯^Y© নৌকা মাঝিসহ জলে ভেসে উঠেছিলরাণী সেই নৌকা চড়ে কাওয়াদীঘি হাওরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন এবং রাজাকে বলে গেলেন আমি আর দীঘিতে থাকবো নাঅতঃপর নৌকাটি অজানা, অচেনা গন্তব্যের দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল
উল্লেখ্য যে, প্রায় তিন মাস সময় লাগে কমলারাণীর দীঘি খনন করতেএত ২৬০ জন শ্রমিক কাজ করেনকথিত আছে যে, শ্রমিকরা কাজ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় প্রতিদিস দীঘির উত্তরে এক কোদাল মাটি কেটে প্রত্যেকে চলে যেতশেষ পর্যন্ত তা একটি দীঘিতে পরিগণিত হয়এই দীঘি কোদালী দীঘি নামে পরিচিতএলাকাতে কমলারাণীর দীঘি সাগর দীঘি নামে পরিচিত অনেকের কাছেআরেকটি গল্প প্রচলিত আছে যে, পানি না উঠায় রাজা ¯^‡cœ দেখলেন যে ৫ জন সুন্দরী ললনা নিজের স্ত্রীসহ দীঘির মধ্যখানে ১৬ হস্ত (হাত) গভীর কোপে সিন্দুর, তৈল আর শংক সহ উপাসনা করলে পানি উঠবেঅবশেষে রাজা ¯^cœ অনুযায়ী তাদের দীঘিতে পাঠালেনকিন্তু পানি উঠার পর চার জন ললনা তীরে উঠলেও রাজার স্ত্রী উঠতে পারেননি বলে জনশ্রুতি রয়েছে। (সংক্ষেপিত)

(তথ্যঃ বাংলার ইতিবৃত্ত   - হিস্টোরিয়ান ডঃ মুমিনুল হক -  পৃষ্টা-৩৪৮)
(ছবি সংগ্রহঃ ওয়েব ডিজাইনার মিশকাত আহমদ)

ঐতিহ্যবাহী পাঁচ গাঁও

উপমহাদেশের প্রাচীন শ্রেষ্ঠ গ্রাম সিলেট বিভাগের মৌলভী বাজার জেলার রাজনগর থানার পাঁচ গাঁওবাংলার অন্যতম সাংবাদিক, সম্পাদক গৌরিশংকর ভট্টাচার্য পাঁচ গাঁও এর সন্তানপাঁচ গাঁও এর আরেক রত্না ও উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা নেত্রী অগ্নিকন্যা লীলা রায় (নাগ) যিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ১০ বসরের অধিককাল কারা বরণ করে ইতিহাসে অম্লান হয়ে আছেনবৃটিশ বিরোধী সমরাস্ত্রে অন্যতম যোগান দাতা হিসেবে পাঁচ গাঁও কর্মকারগণ স্মরণীয় হয়ে আছেনউপমহাদেশের অন্যতম কর্মকার জনার্দন কর্মকার মোঘল আমলে মুর্শিদাবাদে জাহান কোষা তোপ নির্মাণ করেনপরবর্তিতে ঢাকায় গিয়ে কালে জমজম ও বিবি মরিয়ম নামে দুইখানা কামান প্রস্তুত করে বৃটিশদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন 
রাজনগর থাবার পাঁচ গাঁও গ্রামের লীলা রায় কর্তৃক ১৯৩৮ সালে তাঁর মায়ের নামে প্রতিষ্টিত কুঞ্জলতা বিদ্যালয়

পাঁচ গাঁও এর লৌহ শিল্পীরা উপমহাদেশে অন্যতম জাহাজ নির্মাতা হিসেবে সিলেট বিভাগের একচেটিয়া আধিপত্য ছিলবাংলাদেশের প্রথম মহিলা সম্পাদিত জয়শ্রী লিলা নাগ সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়বাংলাদেশে তিনি প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ছাত্রী হিসেবে সহশিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনসিলেট বিভাগের প্রথম দৈনিক পত্রিকা দৈনিক বলাকার সম্পাদক কালি প্রসন্ন দাস পাঁচ গাঁও এর কৃতি সন্তানডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট গিরিশ চন্দ্রনাগ ১৮৮৫ সালে গ্রাজুয়েট প্রাপ্ত হনউল্লেখ্য যে তিনি অগ্নি কন্যা লিলা রায় নাগের পিতাবাংলাদেশের ¯^vaxbZv যুদ্ধে ৫৯ জন নর নারী পাঁচ গাঁও থেকে জীবন দিয়েছেনউপমহাদেশের অন্যতম অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডঃ খালিকুজ্জামান আহমদ পাঁচ গাঁও এলাকার বাসিন্দাএই গ্রামের অন্যান্য ব্যক্তিত্বরা হচ্ছেনঃ মৌলভী বাজার কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অচ্যুতচরন চৌধুরীর লিখিত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত গ্রন্থে র অন্যতম তথ্যদাতা হরকিংকর দাস, লেখক সুরেশ চন্দ্র চক্রবর্তী, লেখক বিনোদ রাম দাস, সঙ্গীত বিশেষঞ্জ গোলক চান ঘোষ, সাহিত্যিক জয়কৃষ্ণ তর্কবাগীশ, লেখক হরিকান্ত ন্যায় বাগীশ, প্রাবন্ধিক হারান চন্দ্র দাস, সাংবাদিক ও এ্যহস্পর্শ প্রত্রিকার সম্পাদক যোগেন্দ্র চন্দ্র সেন, প্রজাপতি দাস এবং বিপ্লবী সুধীর চন্দ্র নাগ প্রমূখপাঁচ গাঁও ইউনিয়নের ভূমিউড়া গ্রাম এককালে ইটারাজ্যের রাজধানী ছিলপাঁচ গাঁও ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ গ্রামে ১৯৬১ সালে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ তাম্রফলক পাওয়া যায়সিলেট অঞ্চলের গ্রামাঞ্চলে সর্বপ্রথম বাবু হরকিংকর দাস পাঁচ গাঁও গ্রামে একটি মধ্য ইংরেজী স্কুল প্রতিষ্ঠিত করেনবৃটিশ আমল থেকে পাঁচ গাঁও গ্রামে একটি আয়ুর্বেদ কারখানা ছিলবর্তমানে পাঁচ গাঁও নামে একটি ইউনিয়ন হিসেবে মর্যাদা পেয়েছেএখানে একটি হাসপাতাল, পোষ্ট অফিস, একটি মহিলা কলেজ, সরকারী প্রাথমিক স্কুল, হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা লাভের মধ্য দিয়ে প্রাচীন পাঁচ গাঁও উপমহাদেশের প্রাচীন শ্রেষ্ঠ গ্রাম হিসেবে আসন করে নিয়েছে তা বলা যেতে পারে
(তথ্যঃ  বাংলার ইতিবৃত্ত    -হিস্টোরিয়ান ডঃ মুমিনুল হক-  পৃষ্ঠা- ৪৩৬ )

উপমহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচঙ্গ

উপমহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচঙ্গঅনেকেই এই গ্রামকে এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বলে অভিহিত করেনহবিগঞ্জে সদর থেকে বানিয়াচঙ্গ গামের দূরত্ব ২ কিঃ মিঃ ও সিলেট শহর থেকে ১১৭ কিঃ মিঃদুপাশে বিস্তীর্ণ অসলের মাঠসোনালী প্রান্তর ধান, আকাশের সাথে মিশে যাওয়া হাওর জনমহাল, আকাশে সাদা বকের মায়াবী খেলাসহ প্রাকুতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত একটি গ্রামের নাম বানিয়াচঙ্গমূল বানিয়াচঙ্গ গ্রামটি ৪টি ইউনিয়নের সমন্ময়ে গঠিত১২০০ বসর আগে বানিয়াচঙ্গ গ্রাম প্রতিষ্ঠা হয়েছেআদি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কেশন মিশ্রের নাম অম্লান হয়ে আছেথানা হিসেবে পরিচিত ১৭৯০ সাল বানিয়াচঙ্গ একটি রাজ্য ছিলরাজবাড়ীর অস্থিত্ব এখন বিদ্যামানবানিয়াচঙ্গ এর নামকরণ নিয়ে নানা কাহিনী রয়েছে হাওরে চাঙ্গা বা মাচাঙ্গা বেঁধে বানিয়া কিংবা ব্যবসায়ীর বসবাস করতো বলে এখানকার নাম বানিয়াচাঙ্গ থেকে বানিয়াচঙ্গ হয়েছেআবার কেউ কেউ বলেন, এই এলাকায় নাকি যুদ্ধ হয়েছিলফলে বিনায়ে জঙ্গ আস্ত আজা অর্থা ঝঁগড়ার উপত্তি হল এখানে বানিয়াচঙ্গ এর নামকরণ হয় বলে অনুমান করা হয়বানিয়াচঙ্গ এ পুটিয়া নামে একটি বিশাল বিল ছিলনানা জাতের পাখি ছিল পুটিয়া বিলেবিলের পাড়ে চাঙ্গ স্থাপন করে বানিয়া নামের এক শিকারী পাখি শিকার করতোএই বানিয়াচঙ্গ থেকে আজকের বানিয়াচঙ্গকথিত আছে একজন বাহ্মণ বণিক বাণিজ্য উপলক্ষে নৌকা যোগে আসেনবানিয়া বা বণিকের মাঝি ছিল চঙ্গ, মানে নমঃশুদ চাড়ালএই বানিয়া ও চঙ্গ দুই শব্দের সমন্ময়ে বানিয়াচঙ্গ এর নামকরণ হয়েছে। 
রাজবাড়ীর অবশিষ্ট অংশ

বানিয়াচঙ্গ সীমানা হচ্ছে উত্তর দিকে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানা, শাল্লা থানা ও হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ থানাদক্ষিনে হবিগঞ্জ থানা সদর ও হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানাপূর্বে হবিগঞ্জ থানার সদর বাহুবল থানা ও নবীগঞ্জ থানাপশ্চিমে আজমিরীগঞ্জ থানা ও কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানাবাংলাদেশের টেলিভিশনের ভরা নদীর বাকে অনুষ্ঠানের জন্য এডভোকেট শাহজাহান বিশ্বাসের রচিত গানে বানয়াচঙ্গের চিত্র ফুটে উঠেছেগানটি নিম্নরূপঃ-

সুরমা নদীর বুকের মানিক শুটকী নদী নাম
সেই নদীর তীরেতে ভাইরে বানিয়াচঙ্গ গ্রাম
দিগে পাশে তিন চারিমাইল এ গেরামটি ভাই
একশ বিশ মহল্লা নিয়া তাহারই রোশনাই
গড়ের খালটি চারদিকেতে বহিয়া চইলাছে
গলার মাঝে মালা যেমন শোভা পাইতাছে
লাখের অধিক বসত সেতায় হিন্দু-মুসলমান
কমলাবতী সাগরদিঘীর রইয়াছে সুনাম
আরে ও------ও---------ও--------
বানিয়াচঙ্গ এর জন্ম নিয়া ধন্য মোর তাই
মনসুর বয়াতি ছিলেন এই গ্রামের জানি
শ্যাম বাউলের এক ভরাটা কান্দে দিনরজনী
কাঁন্দ্যা গেলো আলাল-দুলাল জনমের মতন
বানিয়াচঙ্গ এর সেই কাহিনী শুনেন দিয়া মন
এই দুনিয়া ঘুরলেন যিনি সাইকেল চড়িয়া
রামনাথ বিশ্বাস নামটি তাহাঁর শুনেন সুজনীয়!
কবি জয়তুন বিশ্বাস ছিলো উদ্ভাদ রতন
যার পরশে পাইলা কত জ্ঞানের দরশন
বারিয়াচঙ্গ এর জারি ভাইরে এই করিলাম শেষ
সালাম আদাব সবাইরে ভাই জানাইলাম অশেষ।।

বানিয়াচঙ্গের আব্দুল্লাহ সম্পর্কে গ্রন্থে জাতীয় অধ্যাপক ও উপমহাদেশের প্রখ্যাত দার্শনিক দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফ লিখেন অত্যন্ত কর্মঠ ও স আব্দুল্লাহ এ দেশের খেলাফত আন্দোলনের ¯^v_©K করার জন্য কর্মশীল ছিলেন এবং এক বছর জেলও খেটেছেনসিলেটের মুসলিম রাজনৈতিক জাগরণের তার প্রচুর অবদান রয়েছেন প্রখ্যাত গবেষক মোহাম্মদ ফজলুর রহমান প্রণীত সিলেটের একশত একজন গ্রন্থে আব্দুল্লাহ বানিয়াচঙ্গ স্থান রয়েছেখেলাফত কর্মীদের সাথে ১৯২২-২৩ সাল পর্যন্ত তিনি কারাবরণ করেনতিনি আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীঘ অর্গানাজিং কমিটি ১০ সদস্যের অন্যতম ছিলেনসিলেট রেফারেন্ডাম আন্দোলনে অমানুষিক পরিশ্রম করেনবৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা আব্দুল্লাহ বানিয়াচঙ্গ বাড়ীতে ১৯৪৮ সালে দেশ বরেণ্য আব্বাসী উদ্দিন ও তার পুত্র মোস্তাফা জামান আব্বাসী বানিয়াচঙ্গ এসেছিলেন
আব্বাসী গেয়েছেনঃ-

ও বাজান চল যাই মাঠে লাঙ্গল বাইতে
গরুর কাঁেধ লাঙ্গল দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে...

সুললিত কন্ঠে গাওয়া এই গানটি বানিয়াচঙ্গ বাসীকে মাতওয়ারা করে তুলতোএখানকার মানুষ বৃটিশ আমল থেকে রাজনীতি সচেতনমৌলভী আব্দুল্লাহ আবুল হোসেন, শাহ ক্বারী মুমিন উদ্দিন, হেম সেন ও বিরেন সেন প্রমুখ বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন১৯৯৬ সালে ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাগরদীঘিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ও হবিগঞ্জ-বানিয়াচঙ্গ-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেনদীঘির দৈর্ঘ্য দেড় কিলোমিটার ও প্রস্থ এক কিলোমিটারজমির পরিমাণ ৬৬.৯৩ একরদীঘির চারদিকেই গড়ে উঠেছে জনপদদীঘির পারেই ৩শ বছর পুরোনো বাড়ীর ভগ্নাবশেষ এখনও বিদ্যামানবিশাল পাথরের দারাঘুটি এখনও কিংবদন্তী আছেপ্রাচীনকালে দুপয়লয়ান ভাই এই বিশাল দাবাঘুটি দিয়ে খেলতেন। 
মুকার হাওরের মধ্যে মাকাল কান্দি গ্রাম
শ্রী শ্রী বাউল †Mv¯^vgxi আখড়া ৩শ বছর পুরোনো হিন্দুস্থান তীর্থস্থান২ একর ভূমিতে গড়ে উঠা আঁখড়া বর্তমান পরিচালক মোহন্ত আশুতোষবানিয়াচঙ্গ এর চারপাশে বেষ্টিত খাল, ঈদগাহ, ডিগ্রী কলেজ, মিনার, গণপাঠাগার ও হায়দার শাহার মাজার বানিয়াচঙ্গ কে উপমহাদেশের বৃহত্তম গ্রামের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে তুলেছে
(তথ্য বাংলার ইতিবৃত্ত- " হিস্টোরিয়ান ডঃ মুমিনুল হক "  পৃষ্টা-৪৩৭-৪৩৮)
(ফটো সংগ্রহে ঃ মিশকাত আহমদ  -ডাইনামিক ওয়েব ডিজাইনার- )

বাংলাদেশের ভূ-স্বর্গ ভূমি : শ্রীমঙ্গল


দুটি পাতা একটি কুড়িঁর বৃত্তে বাংলাদেশের ভূ-স্বর্গ © ভূমি শ্রীমঙ্গলচা-এর প্রাণকেন্দ্র শ্রীমঙ্গল আর্ন্তজাতিক ভাবে পরিচিতশ্রীমঙ্গল চা এবং আনারস এর রাজধানী হিসেবেও খ্যাতপ্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের অপূর্ব লীলা ভূমি এবং শ্রীময় ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই জনপদের রয়েছে সুখ্যাতিশ্রীমঙ্গল মৌলভীবাজার জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিতইহার পূর্বে ত্রিপুরার পাহাড়, উত্তর-পূর্বে ভানুগাছের পাহাড়, দক্ষিণে সাতঁগাঁও এর পাহাড় এবং উত্তর-পশ্চিমে হাইল হাওর ও মৌলভীবাজার সদর থানাশ্রীমঙ্গল অতীতের পার্বত্য ত্রিপুরা, আসাম, ঢাকা বিভাগ প্রভৃতি ভৌগোলিক সীমারেখায় অর্ন্তভূক্ত ছিলবর্তমান শ্রীমঙ্গল শেরশাহ প্রবর্তিত পরগনা পদ্ধতির কয়েকটি পরগনা নিয়ে গঠিতএইগুলোর মধ্যে সাঁতগাঁও, চাউঁথলি, গিয়াসনগর, চৌয়াল্লিশের কিছু অংশ দিনার পুরের কিংদংশ এবং আতান গিরির কিয়দংশ। 
লাউয়াছড়া বন, শ্রীমঙ্গলের একাংশ

বৃটিশ আমলের প্রথম দিকে বৃহত্তর সিলেট জেলা সহ শ্রীমঙ্গল ঢাকা বিভাগের অধীনে ছিল১৮৭৮ সালে বৃহত্তর সিলেটকে আসামের সাথে যুক্ত করা হয়১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর শ্রীমঙ্গলসহ বৃহত্তর সিলেট জেলাকে আবার ঢাকা বিভাগের অধীনে নিয়ে যাওয়া হয়১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের পর বৃহত্তর সিলেটসহ শ্রীমঙ্গল আসামের অর্ন্তভুক্ত করা হয়১৮৮২ সালে মৌলভীবাজারকে সাউথ সিলেট মহকুমা ঘোষণা করা হয় এবং ১৯১২ সালে শ্রীমঙ্গলকে থানা ঘোষণা করা হয়শ্রীমঙ্গলকে থানা হিসেবে ঘোষণা করার গ্রেজেট নোটিফিকেশনের তারিখ ও b¤^i হচ্ছে ১০ জানুয়ারী, ১৯১২ ইংরেজী b¤^i ১৭৬ জি.জে১৯১৫ সালে আসাম সরকারের এক নির্দেশে লোকাল বোর্ড চালু হলে শ্রীমঙ্গলকে মৌলভী বাজার লোকাল বোর্ড এর অধীনে ন্যাস্ত করা হয়এই এলাকায় চা-চাষের উপযোগী ভূমি থাকায় এখানে চা বাগান প্রতিষ্ঠা করা হয়চা-পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এই অঞ্চলে রেল লাইন স্থাপিত হয়প্রথম শ্রেনীর মর্যাদা দিয়ে শ্রীমঙ্গল রেল ষ্টেশনের গোড়াপত্তন করা হয়শ্রীমঙ্গল রেল ষ্টেশন প্রতিষ্ঠা করার পূর্বে থানা সদর দপ্তর শ্রীমঙ্গলে স্থানান্তরিত হয়শ্রীমঙ্গল অনেকের কাছে মঙ্গল র্তীত বলে বিবেচিতচাকুরী জীবন শেষে এখানে বসতি স্থাপনের প্রবণতা অতীতে যেমন ছিল বর্তমানেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনিএক কথায় শ্রী অর্থা সুন্দর এবং মঙ্গলের মহামিলন ক্ষেত্র শ্রীমঙ্গল উপজেলা
শ্রীমঙ্গল উপজেলাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী আনারস উপাদন হয়প্রায় পাচঁ হাজার একর ভূমিতে দেশের ৭০% শতাংশ আনারস উপাদিত হয়ে থাকেদেশের একমাত্র উপজেলা হিসেবে শ্রীমঙ্গল চা ও আনারস উপাদনের শীর্ষে অবস্থান করছেতাছাড়া লেচু, লেবু, কাঁঠাল, কাঠ উপাদনে দেশের অন্যান্য উপজেলার মধ্যে র্শীষে রয়েছেপ্রাকৃতিক নয়ণাভিরাম দৃশ্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করেপ্রাকৃতিক ভাবে f~-¯^M©xq হিসেবে যে অবস্থান ঠিক তেমনি শ্রীমঙ্গল নামেও যথার্থ মূল্যায়িত হয়েছেউপমহাদেশের কাশ্মীর রাজ্যকে f~-¯^M© রাজ্য বলে অভিহিত করা হয়বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্য মন্ডিত ভূমি শ্রীমঙ্গলএই দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রীমঙ্গলকে বাংলঅদেশের f~-¯^M© ভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।  
(তথ্য : সিলেট বিভাগের ইতিবৃত্ত- "হিস্টোরিয়ান ডঃ মুমিনুল হক" - পৃষ্টা-১২০)
(ফটো সংগ্রহে : মিশকাত আহমদ   'ডাইনামিক ওয়েব ডিজাইনার')

বাংলাদেশের একমাত্র জলপ্রপাত মাধবকুন্ড

বাংলাদেশের বুকের মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু আর ফালাই নদী চিরচঞ্চলার মত ছুটে চলছেশস্য শ্যামল বাংলার স্নিগ্ধ তরুছাঁয়া পুষ্প পল্লবের শোভা আর বিহঙ্গের কলগীতি, মধুর কুঞ্জল প্রভাতের অরুনরাগ ও সায়াহ্নের স্তব্ধ গাম্ভীর্য এক প্রকৃতির লীলা নিকেতন পরিণত করেছেমৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানায় অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র জলপ্রপাত সৃষ্ট কুন্ড, যার নাম মাধবকুন্ড প্রায় তিরাশী মিটার উঁচু পাহাড়ের উপর থেকে জলরাশী এর গাঁ বেয়ে অবিরাম ধারায় সাঁ সাঁ শব্দে নীচে পড়ছেঅবিরাম পতনের ফলে নীচে সৃষ্টি হয়েছে কুন্ডের আর কুন্ডের প্রবাহমান স্রোতধারা বরিষ ধারার মাঝে শান্তির বারিধারার মতো মাধব ছড়া দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছেউল্লেখ যোগ্য যে বিশ্বের সবচেয়ে জলপ্রপাত হচ্ছে এঞ্জেলস ফলস ইহা ভেনুজুয়োলায় অবস্থিতএর উচ্চতা ৩২১২ ফুট
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা মাধবকুন্ডের ঝর্ণা


মাধবকুন্ডের নামকরণ সম্পর্কে কথিত আছে যে শীহট্টের রাজা গঙ্গাধ্বজ ওরফে গোবর্ধন পাথারিয়া পাহাড়ে একটি বিশ্রামাগার নির্মাণ শুরু করলে তথায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মাটির নীচে একজন সন্ন্যাসীকে দেখতে পানতখন তিনি উক্ত সন্ন্যাসীর পদ বন্দনা ও স্তুতি শুরু করলে সন্ন্যাসী তাকে নানা উপদেশ সহ তাকে (সন্ন্যাসীকে) এ কুন্ডে মাধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথীতে বিসর্জন দিতে নির্দেশ দেনরাজা তা পালন করেনসন্ন্যাসী বিসর্জিত হওয়া মাত্র তিন বার মাধব, মাধব, মাধব নামে দৈববাণী হয়সম্ভবতঃ এ থেকে মাধবকুন্ড নামের উপত্তিআবার কারো কারো মতে মহাদেব বা শিব এর পূর্ব নাম মাধব এবং এর নামানুসারেই তার আবির্ভাব স্থানের নাম মাধবকুন্ড এখানে উল্লেখ্য যে মাধব তীর্থের জলপ্রপাত যে কুন্ডের সৃষ্টি করেছে সে কুন্ডের পার্শ্বেই স্থাপন করা হয়েছে শিব মন্দিরযে টিলার গাঁ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে এ টিলা সম্পূর্ণ পাথরেরএছাড়া নীচে ছড়ার মধ্যে ছড়িয়ে আছে বিরাটকায় সুদৃশ্য পাথর রাশি যা দর্শনার্থীদের অত্যন্ত উপভোগ্যকুন্ডের ডান পার্শ্বে পাথরের গায়ে াকেটি পাথরের গহব্বর বা গুহার সৃষ্টি হয়েছেস্থানীয় ভাষায় এ গুহাকে কাব বলা হয়এ কাব প্রাকৃতিক ভাবেই সৃষ্টিসর্বশেষ ১৩৪২ সালে বিষ্ণুদাস সন্ন্যাসী মাধবকুন্ড পশ্চিমাংশে কমলা বাগান করার উদ্দেশ্যে যামিনী ও কথা সিন্দু দাস সহ নবীন বাবুকে অনুসঙ্গী করে কমলা বাগান স্থাপন করেন১৩৪৬ সালে কমলা বাগান সহ মাধবকুন্ড তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব তাদের উপর ন্যাস্ত করেনসেই কমলা বাগান আজও আছে এবং এর সুনাম বাংলাদেশের সর্বত্রতখনকার সময় মাধবকুন্ড অঞ্চল ছিল হিংস্র পশুর চারণ ক্ষেত্রপুরী বাবা এবং নাগ বাবার সাথে বনের রাজা বাঘেরও সখ্যতা ছিল বলে জানা যায়মাধবকুন্ডে দুটি বিশেষত্ব আছে (১) অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য মন্ডিত স্থান এবং (২) হিন্দুদের তীর্থস্থান যা মাধব তীর্থ নামে সকলের কাছে পরিচিত

মাধবকুন্ডের অপুর্ব সৌন্দর্য্যের কাব্যিক ছন্দের কিছু অংশ তুলে ধরা হলঃ-
টিলা সমতল উপত্যকা সমেত             শ্রী ভূষিতা শ্রী ভুমি
কতোনাভরন ধর তুমি                 তোমাতেই রয় শোভা বিষ্ময়
কুঞ্জ কানন শ্রী কানন শ্রী মনোরম         মাধবকুন্ড জলপ্রপাত


পাথারিয়া পাহাড়ের প্রাচীন নাম ছিল আদম আইর পাহাড়পাথারিয়া পাহাড়ের বুকে সৃষ্ট এই জলপ্রপাত এর অবস্থান সীমান্তবর্তী থানা বড়লেখা ৮নং দক্ষিনভাগ ইউনিয়নের অধীনে গৌর নগর মৌজার অর্ন্তগতপাথারিয়া পাহাড়টি কঠিন পাথরের গঠিত পাহাড়ের বৃহ অংশ জুড়ে ছড়া রয়েছেছড়ার উপরের অংশের নাম গঙ্গমার ছড়া আর নীচের অংশের নাম আধব ছড়াপ্রায় ২০০ ফুট উঁচু থেকে নীচে খাড়াভাবে পানি গড়িয়ে পড়ছেপানি পড়ে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট কুন্ডেরমাধবকুন্ড আসতে মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে জুরী, কাঠালতলী হয়ে ৭০ কিলোমিটার এবং সিলেট থেকে বিয়ানীবাজার হয়ে ৭২ কিলোমিটার আর কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দুরুত্বপাহাড়ের উপর থেকে প্রস্তরের উপর দিয়ে ছুটে আসা পানির স্রোত দুভাগে বিভক্ত হয়ে হঠা খাড়াভাবে উঁচু পাহাড় থেকে একবার নীচে পড়ে যায়পাহাড়ের গাঁ বেয়ে পড়ে নাএত দুটি ধারা সৃষ্টি হয়একটি বড়, একটি ছোটবর্ষাকালে ধারা দুটি মিশে যায়জলরাশি যেখানে পড়ছে, তার চর্তুরদিকে পাহাড়তার নীচে কুন্ডআর তার বিপরীতে একটি গুহার মত বিশাল গর্ত আছেএই স্থান অনেক গভীরআর এই কুন্ডই মাধবকুন্ডকুন্ডের মধ্যে জেগে উঠা একটি পাথর আছেএই পাথরের বুক জলে দাড়াঁনো যায়যে পাহাড়ের গাঁ বেয়ে পানি পড়ছে সে পাহাড় সম্পূর্ণ পাথরের তৈরি প্রাকৃতিক ভাবেমাধবকুন্ডে অত্যন্ত আকর্ষণ হলো পাথর১৯৯৯ সালের গৃহীত পরিমাপ অনুসারে পতনশীল পানি ধারের পাশ দিয়ে উপর থেকে কুন্ডের গভীরতা সহ মাধবকুন্ডের উচ্চতা ১৬২ ফুটমাধবকুন্ডে বাংলাদেশের পর্যটন কর্পোরেশন একটি রেষ্টুরেন্ট নির্মাণ করেছে
(তথ্যঃ সিলেট বিভাগের ইতিবৃত্ত- "হিস্টোরিয়ান ডঃ মুমিনুল হক" পৃষ্টা ১১৪-১১৫)
(ফটো সংগ্রহেঃ মিশকাত আহমেদ)