উপমহাদেশের প্রাচীন শ্রেষ্ঠ গ্রাম সিলেট বিভাগের মৌলভী বাজার জেলার রাজনগর থানার পাঁচ গাঁও। বাংলার অন্যতম সাংবাদিক, সম্পাদক গৌরিশংকর ভট্টাচার্য পাঁচ গাঁও এর সন্তান। পাঁচ গাঁও এর আরেক রত্না ও উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা নেত্রী অগ্নিকন্যা লীলা রায় (নাগ) যিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ১০ বৎসরের অধিককাল কারা বরণ করে ইতিহাসে অম্লান হয়ে আছেন। বৃটিশ বিরোধী সমরাস্ত্রে অন্যতম যোগান দাতা হিসেবে পাঁচ গাঁও কর্মকারগণ স্মরণীয় হয়ে আছেন। উপমহাদেশের অন্যতম কর্মকার জনার্দন কর্মকার মোঘল আমলে মুর্শিদাবাদে জাহান কোষা তোপ নির্মাণ করেন। পরবর্তিতে ঢাকায় গিয়ে কালে জমজম ও বিবি মরিয়ম নামে দুইখানা কামান প্রস্তুত করে বৃটিশদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
![]() |
রাজনগর থাবার পাঁচ গাঁও গ্রামের লীলা রায় কর্তৃক ১৯৩৮ সালে তাঁর মায়ের নামে প্রতিষ্টিত কুঞ্জলতা বিদ্যালয় |
পাঁচ গাঁও এর লৌহ শিল্পীরা উপমহাদেশে অন্যতম জাহাজ নির্মাতা হিসেবে সিলেট বিভাগের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা সম্পাদিত জয়শ্রী লিলা নাগ সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে তিনি প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ছাত্রী হিসেবে সহশিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। সিলেট বিভাগের প্রথম দৈনিক পত্রিকা দৈনিক বলাকার সম্পাদক কালি প্রসন্ন দাস পাঁচ গাঁও এর কৃতি সন্তান। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট গিরিশ চন্দ্রনাগ ১৮৮৫ সালে গ্রাজুয়েট প্রাপ্ত হন। উল্লেখ্য যে তিনি অগ্নি কন্যা লিলা রায় নাগের পিতা। বাংলাদেশের ¯^vaxbZv যুদ্ধে ৫৯ জন নর নারী পাঁচ গাঁও থেকে জীবন দিয়েছেন। উপমহাদেশের অন্যতম অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডঃ খালিকুজ্জামান আহমদ পাঁচ গাঁও এলাকার বাসিন্দা। এই গ্রামের অন্যান্য ব্যক্তিত্বরা হচ্ছেনঃ মৌলভী বাজার কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অচ্যুতচরন চৌধুরীর লিখিত ’ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত গ্রন্থে ’ র অন্যতম তথ্যদাতা হরকিংকর দাস, লেখক সুরেশ চন্দ্র চক্রবর্তী, লেখক বিনোদ রাম দাস, সঙ্গীত বিশেষঞ্জ গোলক চান ঘোষ, সাহিত্যিক জয়কৃষ্ণ তর্কবাগীশ, লেখক হরিকান্ত ন্যায় বাগীশ, প্রাবন্ধিক হারান চন্দ্র দাস, সাংবাদিক ও এ্যহস্পর্শ প্রত্রিকার সম্পাদক যোগেন্দ্র চন্দ্র সেন, প্রজাপতি দাস এবং বিপ্লবী সুধীর চন্দ্র নাগ প্রমূখ। পাঁচ গাঁও ইউনিয়নের ভূমিউড়া গ্রাম এককালে ইটারাজ্যের রাজধানী ছিল। পাঁচ গাঁও ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ গ্রামে ১৯৬১ সালে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ তাম্রফলক পাওয়া যায়। সিলেট অঞ্চলের গ্রামাঞ্চলে সর্বপ্রথম বাবু হরকিংকর দাস পাঁচ গাঁও গ্রামে একটি মধ্য ইংরেজী স্কুল প্রতিষ্ঠিত করেন। বৃটিশ আমল থেকে পাঁচ গাঁও গ্রামে একটি আয়ুর্বেদ কারখানা ছিল। বর্তমানে পাঁচ গাঁও নামে একটি ইউনিয়ন হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। এখানে একটি হাসপাতাল, পোষ্ট অফিস, একটি মহিলা কলেজ, সরকারী প্রাথমিক স্কুল, হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা লাভের মধ্য দিয়ে প্রাচীন পাঁচ গাঁও উপমহাদেশের প্রাচীন শ্রেষ্ঠ গ্রাম হিসেবে আসন করে নিয়েছে তা বলা যেতে পারে।
(তথ্যঃ বাংলার ইতিবৃত্ত -হিস্টোরিয়ান ডঃ মুমিনুল হক- পৃষ্ঠা- ৪৩৬ )
0Awesome Comments!